বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৪ অপরাহ্ন
আইরিন রুবিনা হক লিয়াঃ— কান্নার হাহাকারে গুমোট পৃথিবী । মৃত্যুশোকে পাথর হয়ে গেছে পৃথিবীর মানুষ । কভিড-১৯ যে ভয়ংকর হানা দিয়েছে বিশ্বের প্রায় ২০৪ টি দেশে, পৃথিবী সৃষ্টির পর পৃথিবীতে এত বড় মহামারী আর হয়নি । বিগত শতাব্দীর মহামারীগুলোতে এর চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেলেও তা ছিল নির্দিষ্ট অঞ্চল ভিত্তিক । একসাথে সমগ্র বিশ্বজুড়ে এত ভয়ংকর মৃত্যুথাবা আর কোন দিন হয়নি । অনেকের মতে এ যেন পৃথিবীর অকৃতজ্ঞ মানুষের উপর প্রকৃতির মস্ত বড় অভিমান । এবার যদি হয় বোধোদয় প্রকৃতির এই অভিমানে । মানুষের বোধোদয় হবার সময় এসেছে । বিবেককে জাগ্রত করার সময় এখনই । প্রকৃতি তার মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানব জাতির উপর থেকে । মানুষের মধ্যে গড ফিয়ারিং এটিটিউড টাই যেন উঠে গেছে । মানুষ এখন ক্ষমতার প্রদর্শনী আর নিরীহ মানুষের উপর নিপীড়নের প্রতিযোগিতায় নেমেছে । বেপরোয়া জীবন, অবাধ যৌনতা, মানব হত্যা, শিশু হত্যা , গণহত্যা, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, ক্ষমতার দম্ভ, নিপীড়ন, জবরদখল, ব্যভিচার, ধর্ষণ, লুন্ঠন, রাহাজানি, অন্যের সম্পদের দখল, মানব পাচার, নারী ও শিশু পাচার, এতিমের অধিকার হরণ, এতিমের সম্পদ দখল, ঠকবাজি, শঠতা, প্রহসন, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা, বিদ্বেষ ইত্যাদি পাপাচার যারপরনাই বেড়ে গেছে এবং বর্তমান পৃথিবীতে তার অস্বাভাবিক হারে বধৃন পৃথিবীকে বড় অপবিত্র ও নোংরা করে তুলেছে । মানুষ স্রষ্টার আইন অমান্য করে নিত্য নিমজ্জিত পাপাচারে।
আরও পড়ুনঃ লোহাগাড়ায় ১ পরিবারকে লকডাউন করল ইউএনও
খোদাভীতি বা গড ফিয়ারিং সম্পর্কে নিচের লাইনগুলো জগৎবিখ্যাত । The most precious attribute in human life is the tendency of God fearing. The three precious things are to be generous despite your poverty, to be pious and god fearing when not watched, to say a word of truth before someone of power. If the fear of God is the beginning of Wisdom, the fear of man is the beginning of misery, compromise and disappointment. The remarkable thing about fearing God is that when you fear God, you fear nothing else, whereas if you do not fear God, you fear everything else. God has a perfect plan for us. He never does it all at once, just step by step because he wants to teach us to walk by faith or by sight. Always pray to 9 have eyes that see the best, a heart that forgive the worst, a mind that forgets the bad and a soul that never loses faith. When God pushes you to the edge of difficulty, trust him fully. Because two things can happen. Either he’ll catch you when you fall or he will teach you how to fly.
মানুষের সবগুলো নৈতিক গুনাবলীর মধ্যে অন্যতম হলো মানবতাবোধ । মানুষ মানুষের জন্যে । সারা পৃথিবী জুড়ে নভেল কভিড-১৯ এর ভয়ংকর থাবায় যে হাহাকার তৈরি হয়েছে, তা প্রভাবে বাদ যায়নি বাংলাদেশও । গোটা পৃথিবীতে যেন একটা স্তব্ধ হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে ।পৃথিবীর ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায় ভয়ংকর মহামারী প্রায় প্রতি শতাব্দীতেই ছিল । কিন্তু ঐসব ছিল কিছু বিশেষ এলাকা জুড়ে । এত বড় মহামারী একসাথে সমগ্র বিশ্বজুড়ে, তা ইতিহাসে বোধ হয় এটাই প্রথম । একটি ক্ষুদ্র ভাইরাসের কাছে নিঃস্তব্ধ অসহায় হয়ে পড়েছে গোটা পৃথিবী । পৃথিবী পরাশক্তিগুলো যতটা কাবু করতে পারেনি, করোনা তা করেছে । মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনায় দল মত, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত পৃথিবীর সব মানুষ এক সাথে লুটিয়ে পড়েছে । দু’হাত তুলে উপরওয়ালার কৃপা ভিক্ষা চাইছে আজ বিশ্বের সমস্ত ধর্মের সব জাতিগোষ্ঠী ।
আরও পড়ুনঃ জামালপুরের জেলা প্রশাসকের ৩ বিধিনিষেধ
ভয়ংকর এউ করোনা ভাইরাস টি জাতভেদ চিনেনা, চিনেনা ক্ষমতাবান আর ক্ষমতাহীনের পার্থক্য, চিনেনা গরীব ধনীর পার্থক্য । চিনেনা রাষ্ট্রভেদ আর পরাশক্তি কেও । চিনেনা শৌর্যবীর্যবানদেরও। বাদ যায়নি ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ব্রিটেনের রাজ পরিবারের প্রিন্স চার্লস ও । বাদ যায়নি কোন দেশ ও জাতি । ইউসিআর ওয়ার্ল্ড নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন । বাকিংহাম প্যালেস এ খবর কনফার্ম করেছে ।ব্রিটিশ প্রধামন্ত্রী বরিস জনসন ও ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানককও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ।লন্ডনে সোমালিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রান গেল করোনায় । পৃথিবীর কোন যুদ্ধ যা পারেনি, করোনা তা পেরেছে। নিথর করে দিয়েছে তামাম বিশ্বকে । গোটা বিশ্বে আজ লক ডাউন বিরাজমান। স্যাটেলাইট থেকে পাঠানো ছবি দেখলে মনে হয় জনমানবহীন বিশ্ব । মনে হয় পৃথিবীটাই তার শৈশবে আছে । সবে মানুষ জন্মানো শুরু করেছে । দু একটা করে বিস্তার শুরু হয়েছে । পৃথিবীর যে দৃশ্য পৃথিবীবাসী দেখেনি কভূ, সে দৃশ্য পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছে এই নোভেল করোনা ভাইরাস ( কভিড-১৯) নামক অদৃশ্য এক জীবানু। যে শহর কখনো ঘুমায়না, সে শহর আজ ঘুমন্ত। নিউইয়র্ক, ঢাকা, ওয়াশিংটন, লন্ডন, রোম, ভেনিস, মিলান, দিল্লি, কলকাতা, প্যারিস, তেহরান, ইস্তাম্বুল সহ আরো কত শত দিবানিশি জাগ্রত ও ব্যস্ত শহর গুলো আজ নিস্তব্ধ, নিথর হয়ে গেছে ।
আরও পড়ুনঃ ঠাকুরগাঁওয়ে একরাতেই তৈরি বালিয়া মসজিদ
আজ আমেরিকার বড় বড় শহরগুলো জনমানবশূন্য । নিউইয়র্কের টাইমস্কয়ার এখন শূন্য মরুদ্যানের মতো । ব্রিটেনের সবচয়ে পপুলার ও দর্শৃনীয় স্থান যেখানে পর্যটকদের ভীড় লেগেই থাকতো, সেই লন্ডন ব্রীজে এখন হাটছেনা মানুষ । আল্লা্হর ঘর বায়তুল্লাহ(ক্বাবা শরীফ) যা কোনদিন খালি হতে দেখা যায়নি আজই টিভিতে দেখলাম একদম জনশূন্য । একেবারে একটা মানুষও নেই সেখানে। এতবড় ভয়ংকর চিত্র পৃথিবীর জন্য যে কোন বারতা নিয়ে আসছে আল্লাহ মালুম । কাবার চারপাশে ঘুরছেনা মানুষ । আবাবি পাখি তওয়াফ করতে দেখা গেছে ইউটিউবের এক ভিডিওতে । ভ্যাটিকানে এখন মানুষ বিহীন কবুতর দেখা যাচ্ছে । সমগ্র ইউরোপ যা বিশ্বের ইকোনোমি এর মোড়ল আজ মুখ থুবরে পড়েছে । এত বড় বিপর্যয় পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে আর দেখা দেয়নি ।
জাতীয় তথা বৈশ্বিক এই দুর্যোগে সরকার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই জাতির বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে অত্যন্ত অত্যাবশ্যকীয় স্থিতাবস্থা ঘোষনা দিয়েছে যা ছাড়া এই মহামারী থেকে মুক্তি ও পরিত্রানের কোন উপায় নেই । রাষ্ট্রীয় এই আদেশ রাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণে সকল কে মেনে চলা উচিৎ এবং সোস্যাল ডিসটেন্সিং নিশ্চিতকরনে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিৎ। কমিউনিটি ডিসটেন্সিং এখন আপাতত প্রথম কাজ, সঠিকভাবে এই মহাযুদ্ধে জিততে হলে । কিন্তু এই সোস্যাল ডিসটেন্সিং নিশ্চিত করনের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত এই দেশব্যাপী অচলবস্থায় কেমন আছেন এদেশের গরীব, অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলি ?
আরও পড়ুনঃ নড়াইলে কর্মহীন ২০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছে ‘স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন’
বিশ্ব ব্যাংকের মতে অতি ধনী বৃদ্ধির হারের দিকে বাংলাদেশ পৃথিবীতে প্রথম । আর ধনী বৃদ্ধির হারে তৃতীয় । বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ । এদেশে প্রচুর মানুষ আজো দিনমজুর দিন এনে দিন খায় । প্রতিদিন তাদের কাজে যেতে হয় । প্রতিদিনকার রোজগার প্রতিদিন করতে হয় । আজ কাজে না গেলে তার আজকের দিনের ঘরের চাল কেনার টাকা যোগাড় হবেনা এমন সংখ্যা লক্ষ্যাধিক । রয়েছে রিক্সওয়ালা ও প্রান্তিক চাষী, রয়েছে ডেইলি বেসিস কর্মচারী, কারখানার কর্মচারী, রয়েছে গৃহভৃত্য বা গৃহকর্মী যাদের সংসার চলে আপনার আমার বাসায় কাজ করে । এই চলমান স্থিতাবস্থাকে কেন্দ্র করে যাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে,যাদের দৈনন্দিন আয়ের উৎসটুকুও বন্ধ হয়ে গেছে,তাদের দিকে নজর দিন। আমাদের উচিৎ তাদের বেঁচে থাকার দায়িত্ব কাধে নেওয়া । তারাও মানুষ । তাদেরও জীবন সংসার রয়েছে । তাদেরও সন্তান সন্ততি ও পরিবার পরিজন রয়েছে ।
আরও পড়ুনঃ নড়াইলের এমপি মাশরাফির করোনা সেবা প্রদান করতে অ্যাম্বুলেন্স দিলেন
আমাদের ভাবা উচিৎ এখনই, এই সব খেটে খাওয়া মানুষেরাই দিনরাত খেটে আমাদের কে সুখ এনে দেয়। আমাদের ব্যস্ত জীবনে আমাদের সংসারে কিংবা অফিসে কিংবা রাস্তাঘাটে যেসব বুয়া, পিয়ন, ক্লিনার, মেসেঞ্জার, কুলি, লেবার, লোডার, রিকশা পোলার, ভ্যানচালক, সুইপার বা ঝাড়ুদার, মেথর ও অন্যান্য কাজে নিয়োজিত দিনমজুরেরা যারা আমাদের কষ্ট লাঘব করে নানা কাজে সাহায্য করে, ঘরে ও ঘরে বাইরে হাজারো কাজে আমরা তাদের ডাকি, তাদের ছাড়া আমাদের একদিনও চলেনা এমন লোকগুলোকে যদি সংস্রব এড়াতে হঠাৎ বিদায় করে দেই, তাহলে এরা কোথায় যাবে? আমাদের দেয়া টাকায় যার সংসার চলে, আপনি আমি কাজ না করালে অথবা টাকা না দিলে যার ঘরে চাল কিনা হবেনা, যার উনুনে আগুন জ্বলবেনা, একদিন ভ্যান না চালালে যার ঘরের মানুষ না খেয়ে মারা যাবে, একদিন রিক্সা না চালালে যার ঘরের অসুস্থ মায়ের প্রতিদিনকার ঔষুধ কেনা হবেনা, যার সন্তানের মুখের ভাত হবেনা সেইসব মানুষগুলোর প্রতিদিনের রোজগার যদি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় এই আকস্মিক রুদ্ধাবস্থায়, তাহলে তারা কোথায় যাবে? কি খাবে?
এই স্থিতাবস্থায় সারা দেশ তথা সারা বিশ্বের যে অচলাবস্থা বিরাজ করছে, তাতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে দেশের অনেক সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ, যদিও এ সমস্যাটি অত্যন্ত সাময়িক এবং তা জাতির বৃহত্তম কল্যানে সাধিত । তাদের প্রতি করুনা নয়,ভ্রকুটি নয়, অবহেলা নয়,আপনার সহানুভুতির দৃষ্টি সম্প্রসারন করুন । বাড়িয়ে দিন ভালবাসার হাত । মনে রাখবেন-তারাও মানুষ। আপনার জীবনের লজিষ্টিক সাপোর্ট দিতেই তারা ব্যস্ত থাকে । তারা আপনার কষ্ট লাঘব করে থাকে সবসময় । তারা আছে বলেই আপনি হয়তো জীবনের স্বাদ ভোগ করতে পারেন । ভেবে দেখুনতো আপনার বাসায় কাজের বুয়াটি একদিন না আসলে কি পরিমান কাজ জমে থাকে । কতটা পেরেশানি হয় আপনার মা, স্ত্রী, কন্যা কিংবা বোনের । একটা লেবার না থাকলে চালের ভারী বস্তাটি হয়তো আপনারই কাঁধে করে তুলতে হবে পাঁচতলায় কিংবা তারও উপড়ে । রিক্সাওয়ালা না থাকলে দুই তিন ক্রোশ পথ হয়তো আপনার হেঁটেই অফিসে যেতে হবে । ক্লিনার না থাকলে ড্রেনের নর্দমা আটকে থাকবে, তা হয়তো আপনারই পরিস্কার করতে হবে/হতো । সমাজে সবারই প্রয়োজনীয়তা আছে । সবাইকেই আমদের দরকার লাগে ।
অতএব, রাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণে এই স্থিতাবস্থাটি আমাদের সফল ভাবে সম্পাদন করা উচিৎ যাতে করে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব হয় । করোনা মোকাবেলায় এখনও অবধি কোন প্রতিষেধক তৈরি হয়নি বিশ্বজুড়ে । দুনিয়া জুড়ে শুধু বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল । ইউরোপের আকাশে বাতাসে লাশের গঁন্ধ । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব গবেষক ও চিকিৎসকদের মতে একমাত্র জনবিচ্ছিন্ন থাকা, সোস্যাল স্পেসিং বা সোস্যাল ডিসটেন্সিং-ই এর একমাত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা । আর তাই এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে সোস্যাল স্পেসিং মেইনটেইন করানোর জন্য এই স্থিতাবস্থা। এটাকে বন্দীদশা হিসাবে না থেরাপী, মেডিসিন অথবা চিকিৎসা হিসাবে নিন । আমরা যদি আমাদের নিজ নিজ বাসার গৃহকর্মী বা কাজের বুয়াটিকে কাজে আসতে মানা করে দেই, সেটাই আপাতত নিরাপদ হবে । তবে সে বাঁচবে কি করে, এটাতো তার চাকরী, এটা করেই সে তার জীবিকা নির্বাহ করে । সেক্ষেত্রে আমাদের উচিৎ হবে, তাকে আপাততঃ একমাসের বেতন দিয়ে ছুটি দিয়ে দেয়া । হয়তো বিবেকবান অনেকেই তাই করেছেন । যদি না করে থাকেন, তবে পুনরায় ভাবুন, নিজেকে দিয়ে ভাবুন-আপনার অফিস যদি আপনাকে এই মাসের বেতন টা না দেয়, আপনিতো ধনী মানুষ, অন্ততঃ ঐ কাজের বুয়াটির চেয়ে, তাহলে আপনার সংসার চালাতেই তো আপনি হিমশিম খাবেন ।দয়া করে সদয় হোন । ভালবাসুন ঐ সমস্ত সুবিধাবঞ্চিত লোকজনকে যারা আপনার জীবনকে প্রতিনিয়ত সহজ করে দেয় ।
আমরা যদি আমাদের একদিনের বিলাসিতার টাকা, একদিনের অহেতুক খরচ, একদিনের আড্ডাবাজির বাজেট টাও তাদের জন্য উৎসর্গ করি, সেটাও কম নয় । সেটাও গড়তে পারে একটি বিশাল ত্রাণ ভান্ডার । বাঙ্গালী বীরের জাতি । যেভাবে ১৯৯১ সালের উপকূলীয় অঞ্চলে বয়ে যাওয়া ঘুর্নিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশীদের পাশে দাড়িয়েছিল সমস্ত বাঙ্গালী জনতা, ২০০৭ সালের সিডর এর সময় দক্ষিাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাড়িয়েছিল মানবিক বাঙ্গালী জাতি,প্রতি বছর শীত ও বন্যার সময় যেভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাড়ায় বাঙ্গালী জাতি, যেভাবে রোহিঙ্গা শরনার্থীদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার ও সমগ্র বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষ, তেমনি পাশে দাড়াবে এবারও । হারবেনা বাংলাদেশ । একটি মানুষও না খেয়ে মরবেনা-একটি মানুষও এমন থাকবেনা যার ঘরে অন্ততঃ খাবার পৌছবেনা-এটা আমার বিশ্বাস। আমি আমার দেশপ্রেমিক আবেগী বাঙ্গালী জাতিকে যতটুকু চিনি, এ জাতি বীর সেনানী, এ জাতি হার মানতে শিখেনি । আমরা চাইলে কি না পারি ? আমরা শুধু সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকি-সরকার থেকে কবে ত্রাণ আসবে, কবে রিলিফ বন্টন করবে সরকার । সরকারতো অনেক কিছুই করছে যা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় । আইন শৃখংলা বাহিনী দিয়ে স্থিতাবস্থা এবং সোস্যাল ডিসটেন্সিং বাস্তবায়ন, জনগনের চিকিৎসা প্রদান, বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনে চিকিৎসা প্রদান, সমগ্র দেশের মানুষের খোজখবর রাখা, সহ আরো অনেক কিছু । আমরা সরকারকে একটু সাহায্য করি । সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র দিনমজুরের পেটের ভাত জোগাতে যে বাজেট লাগে, এইটুকু কি আমরা সকলে মিলে পারিনা? সবাই চাইলেই পারি । সবাই যদি একযোগে চাই তাহলেই আমরা দেশটাকে বদলে দিতে পারি । রাষ্ট্রের প্রতিটা নাগরিক আজকের এই যুদ্ধাবস্থায় এগিয়ে আসা উচিৎ যদি দেশটার প্রতি মিনিমাম ভালবাসা থেকে থাকে, ন্যূনতম দেশপ্রেম ও মমত্ববোধ আপনার থাকে এই মানুষগুলির প্রতি তবে আর দেরী নয়, এগিয়ে আসুন ভাই-সবাই মিলে তাদের পাশে দাড়াই । সবাই মিলে জয় করি এ নতুন যুদ্ধ । একটি নতুন ভোরের প্রতীক্ষায় চলুন সবাই পণ করি,হ্নদয়ে হ্নদয় রাখি,জেগে দেখব নিশ্চয়ই ফুটে উঠেছে প্রাতঃকালের শুভ্র কলি-শান্তিতে, গৌরবে, সৌরভে আমরা আবার মাতিব । ভালবাসি প্রিয় মাতৃভুমিটাকে, বড্ড ভালবাসি ।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন –”জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”।ঈশ্বরের কৃপা মিলে ঈশ্বরের সৃষ্ট জীবের প্রতি দয়া দেখালে । হতে পারে এ ভালবাসায় সন্তুষ্ট হয়ে ঈশ্বর আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন, কৃপা করেছেন বংলাদেশের নিরীহ মানুষগুলিরে । সমস্ত দুনিয়া যখন স্তব্ধ,তখন ঈশ্বরের সাহায্য বিনা কোন উপায় নেই । সম্প্রতি ইতালীর প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে আজ অসহায় মিনতি করেছেন স্রষ্টার কাছে । পৃথিবীর মানুষকে কাঁদিয়েছেন তিনি । উইলিয়াম শেক্সপীযারের অমর সৃষ্টি রোমিও এন্ড জুলিয়েটের দেশ ইতালী এখন লাশের শহর । ইতালীর বাঁতাসে ভেসে আসছে আজ লাশের গন্ধ । ইতালির হ্নদয়ে রক্তক্ষরন হচ্ছে, কাঁদছে ইতালী, কাদছে পুরো বিশ্ব ।কোনভাবেই থামছেনা মৃত্যুর মিছিল ।মৃত্য্যর মিছিল যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে । নিহতদের সৎকার করার লোকও আজ পাওয়াা যাচ্ছেনা । আজ ইতালীর যে আবস্থা, কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না । ইউরোপের সবচেয়ে মানবিক দেশ ইতালী, পৃথিবীর স্বাস্থ্যব্যবস্থায় উন্নততম কয়েকটা দেশের মধ্যে ইতালী অন্যতম । সে দেশেই আজ এত হাহাকার । উপরওয়ালার কৃপা ছাড়া পরিত্রানের কোন উপায় নেই । ইতালীর প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠে আজ ভেঙ্গে পড়ার সুর । জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষনে তিনি বলেছেন-”আমরা মহামারীর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছি । আমরা শারিরীক ও মানসিকভাবে মারা গেছি । আর কী করতে হবে, তা আমরা জানিনা, পৃথিবীর সমস্ত সমাধান শেষ হয়ে গেছে ।একমাত্র সমাধান আকাশের কছে ।” তার এ ভাষণ বিশ্বের মানুষের হ্নদয়কে নাড়া দিয়েছে। স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো বিশ্ব ।
তাই আসুন মানুষের পাশে দাড়াই । একদিনতো সবাইকেই মরতে হবে । চলুন না কিছু ভাল কাজ করি । আমাদের আরেকটু মানবিক হওয়া দরকার । চলমান কানুন মোতাবেক দুরত্ব বজায় রেখে আমরা অসহায় মানুষগুলির জন্য কাজ করি ।
ইংরেজ কবি S.T Coleridge তার The Rime of the Ancient Mariner- এ বলেছেন
“He Prayeth Best,who loveth best
All things both great and small”
আরও পড়ুনঃ পুঠিয়া পৌরসভার উদ্দ্যোগে ১৮০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান
স্রষ্টার কৃপা লাভের অন্যতম উপায় হলো সৃষ্ট জীবের প্রতি ইহসান বা সহমর্মিতা প্রদর্শন করা । দয়া করা ও অসহায় জীবকে ভালবাসা । সমস্ত বিশ্ব মুসলিমের প্রানের স্পন্দন, বিশ্বনবী হযরত মুহম্মত (সাঃ) এর সহীহ হাদীস “ যার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত্রি যাপন করে, সে আমার উম্মত নয় । “ অতএব, আমরা কি করে বসে থাকি? কেমন করে আমাদের বিবেক চুপ করে থাকে ? শব্দ যেথায় নির্বিকার, ক্ষমতা যেথায় ম্রীয়মান, বিবেক সেথায় জাগ্রত যুধিষ্ঠির । আপনার বিবেক কে জাগ্রত করুন । বিপদগ্রস্থ মানুষকে ভালবাসুন । মেলে দিন আপনার ভালবাসার হ্নদয়ের উদার জমিন ।আপনার একটু সহযোগিতা ফুটাতে পারে তাদের মুখে নয়ন জুড়ানো হাসি। ফের ভেবে দেখুনতো,আজ এই চলমান স্থবিরতায় যদি আপনার সন্তান একটা কিছু খেতে চায়, আর দোকান বন্ধ থাকার কারনে আপনি এনে দিতে না পারেন,তাহলে আপন কেমন লাগবে ? এমনি করেই যদি অন্যেরটা ভাবি,যার ঘরে চাল নেই ,যার ঘরে আজ রান্না হয়নি,সেই ঘরের ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না কেমন করে সইবে তার অসহায় বাবা মা? একটা শিশু তো লকডাউন বুঝেনা, ক্ষুধা তাহার সে বাধা মানেনা । জগতের কোন বাবা মা-ই তার সন্তানের কষ্ট সইতে পারেনা, হোক সে গরীব, হোক সে ধনী । দুনিয়ার সব বাবা মায়ের অনুভুতি একই রকম । বাধ্য হয়েই তারা বাইরে বের হবে, আবার বাইরের দুনিয়াটাও লক ডাউন । থমকে গেছে কর্মময় দেশ ও পৃথিবি, রাস্তায় মানুষ নেই । রিক্সায় উঠার লোক নেই । লেবার কাজ করাবার মিল ফ্যাক্টরী সব বন্ধ । অফিস আদালত স্তব্ধ, কোথায় মিলবে কাজ আর কোথা থেকে আসবে খাবার ? এমন সময় আমরা যদি পাশে না দাড়াই,তবে কে সহায়হীন জীবনের বন্ধু হবে ?
লেখকঃ শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply