বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ অপরাহ্ন
আজকের দিগন্ত অনলাইন ডেস্ক:— গ্রীষ্মপ্রধান দেশে রোদের প্রখরতা সারাবছরই বেশি থাকে। তবে বছরের বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস জুড়ে যে পরিমাণ গরম পড়ে, তাতে দিনেরবেলা বাড়ি থেকে বেরনো দায়! কিন্তু বাইরে না বেরলেও তো চলবে না। অফিস থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসা, গায়ে রোদ লাগা অবশ্যম্ভাবী। এতে শুধু শরীরেরই কষ্ট নয়, ত্বক আর চুলেরও সর্বনাশ। অবশ্য সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনই সমাধানও মজুত রয়েছে প্রকৃতির ভাণ্ডারে।
আমাদের অতি পরিচিত সবুজ, রসালো ফল শসা ।এই ফল শরীর ঠান্ডা রাখতে যেমন উপকারী, তেমনই ত্বক এবং চুল ফ্রেশ রাখতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এর প্রায় ৯০ শতাংশই জল, ফলে প্রতিদিন শসা খেতে পারলে শরীর যে ফ্রেশ থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। একইভাবে দৈনন্দিন রূপচর্চায় একে সামিল করলে ত্বক এবং চুলের তরতাজা হওয়াও গ্যারান্টেড। তাই তো আদি-অনন্তকাল ধরে রূপচর্চা ব্যবহৃত হয়ে আসছে শসা। টোনার থেকে স্ক্রাব, মাস্ক থেকে লোশন—শসা দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারবেন সবকিছু।
লুন জেনে নেওয়া যাক।
ত্বকের যত্ন নিন:—
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ঠাসা শসার পিএইচ ত্বকের পিএইচের সমান হওয়ায়, ত্বক নরম এবং আর্দ্র রাখতেও শসার জুড়ি মেলা ভার। তাছাড়া শসার ত্বক উজ্জ্বল করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তাই ডার্ক সার্কলের সমস্যা বহুদিন ধরেই শসা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যাঁদের ডার্ক সার্কলের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা নিয়মিত শসা ব্যবহার করলে হাতেনাতে ফল পাবেন। চোখের উপর শসার চাকতি রেখে দিন। ১৫-২০ মিনিট পর তুলে নিন। মুখ ধোওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এখানেই শেষ নয়। ত্বকের অন্যান্য সমস্যা সমাধান করতেই কাজে লাগাতে পারেন শসা।
০১) ফেশিয়াল টোনার:– অর্ধেকটা শসা কুচিয়ে তাতে ৩ টেবলচামচ উইচ হেজ়েল (এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট, যে কোনও ভাল প্রসাধনীর দোকানে পাবেন) বা গোলাপজল মিশিয়ে পিউরি করে নিন। এতে ২ টেবলচামচ ডিস্টিলড ওয়াটার মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে রেখে দিন। প্রতিদিন তুলোয় করে এই মিশ্রণ নিয়ে মুখে লাগান। দেখবেন ত্বক অনেক বেশি ঠান্ডা, ফ্রেশ এবং আর্দ্র থাকবে।
০২) রিজুভিনেশন মাস্ক:– কমপ্লেকশন উজ্জ্বল করতেও ব্যবহার করতে পারেন শসা। খানিকটা শসার রসের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা টাটকা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন এই মিশ্রণ ত্বকে লাগান। নিমেষে ত্বকে আসবে জেল্লা।
০৩) অ্যাকনে ও ইনগ্রোন হেয়ার ট্রিটমেন্ট:– খানিকটা শসার রস, অল্প অ্যাপল সিডার ভিনিগার, অ্যালোভেরা জেল এবং খানিকটা টোম্যাটোর রস মিশিয়ে নিলেই তৈরি ম্যাজিক পোশন! এটি ত্বকের রন্ধ্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে। ফলে অ্যাকনে কিংবা ব্রন থেকে নিষ্কৃতি। আবার যদি ত্বকে কোনও ইনগ্রোন হেয়ার থাকে, সেক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে পারেন এই মিশ্রণ। তুলোয় করে চেপে চেপে লাগান। নিয়মিত ব্যবহারে উপকার পাবেন। তবে কয়েক মিনিট পরে ত্বক ধুয়ে নিতে ভুলবেন না যেন!
০৪) অ্যান্টি-পিম্পল মাস্ক:– সমপরিমাণে হলুদগুঁড়ো এবং শসার ক্বাথ মিশিয়ে নিন। এতে একটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিলেই তৈরি হবে অ্যান্টি-পিম্পল মাস্ক। ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিন। হলুদ থাকায় এই মিশ্রণ ব্যবহার করলে মুখে হলুদের দাগ থেকে যেতে পারে। তাই এই মাস্ক ছুটির দিনে ব্যবহার করাই ভাল।
০৫) অ্যান্টি-এজিং মাস্ক:– ত্বকের দৃঢ়তা বজায় রাখতে এই মাস্ক দারুণ কার্যকরী। একটা শসার খোসা ছাড়িয়ে বেটে নিন। এতে একটা গোটা পাতিলেবুর রস এবং ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে নিন। চোখের অংশ বাদে পুরো মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে, স্কিনটোন ইভন করতে, ত্বক উজ্জ্বল রাখতে এবং ত্বকের দৃঢ়তা বজায় রাখতে এই মাস্ক ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।
০৬) অ্যান্টি-ট্যান মাস্ক:– ২ টেবলচামচ ওটসগুঁড়ো, ২ চা-চামচ টকদই, ২ চা-চামচ মুলতানি মাটি এবং ২ চা-চামচ শসার রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ বানিয়ে ফ্রিজেও রেখে দিতে পারেন। ৩-৪ দিন অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবেন। রোদ থেকে ফিরে পুরো মুখে এই মাস্ক লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ট্যানও দূর হবে এবং ত্বকও কোমল এবং মসৃণ হবে।
০৭) অ্যান্টি-রিঙ্কল মাস্ক:– ২ টেবলচামচ শসার রস, সামান্য পরিমাণে ডিমের সাদা অংশ, ১ চা-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক হয়ে উঠবে টানটান, বলিরেখাও কমবে।
০৮) ময়শ্চারাইজ়িং মাস্ক:– ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে নানাভাবে শসা ব্যবহার করতে পারেন। সবার ত্বকের ধরন তো এক নয়। তবে ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন, আর্দ্রতা সব ধরনের ত্বকের জন্যই মাস্ট। তবে ত্বকের ধরন বুঝে মাস্ক বাছুন। কারণ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যে ধরনের মাস্ক কার্যকরী হবে, শুষ্ক ত্বকের জন্য সেই মাস্ক অতটাও কার্যকরী হবে না। তাই বিভিন্ন ধরনের ত্বকের কথা মাথায় রেখে রইল তিন ধরনের মাস্কের রেসিপি।
০৯) মাস্ক ১ (স্বাভাবিক ত্বকের জন্য):– ১ চা-চামচ ওটসের মধ্যে খানিকটা শসার ক্বাথ মিশিয়ে রেখে দিন। আধঘণ্টা পর এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
১০) মাস্ক ২ (তৈলাক্ত ত্বকের জন্য):– আধকাপ শসাকুচির সঙ্গে অর্ধেক অ্যাভোকাডো, একটা ডিমের সাদা এবং ২ চা-চামচ গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে ফেটিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
১১) মাস্ক ৩ (শুষ্ক ত্বকের জন্য):– অর্ধেক শসার সঙ্গে ১ টেবলচামচ টকদই মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
১২) সুদিং স্ক্রাব:– এককাপ সাদাচিনি, ৩/৪ কাপ শসাকুচি, কয়েকটা তুলসীপাতা এবং ১/৪ কাপ নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন এই মিশ্রণ স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। শুধু মুখেই নয়, গোটা শরীরেই এই স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক কোমল এবং মসৃণ হবে।
১৩) কুলিং লোশন:– যতই ঘাম হোক, গরমেও কিন্তু বডি লোশন ব্যবহার করা মাস্ট। তেলতেলে ক্রিম ব্যবহার করতে না চাইলে, বাড়িতেই বানিয়ে নিন গরমের লাইট বডি লোশন। একটা শসা, ১/৪ কাপ নারকেলের দুধ এবং ১/৪ কাপ অ্যালোভেরা জেল একসঙ্গে বেটে নিন। এই মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন।
১৪) ফেশিয়াল মিস্ট:– গরমকালে ত্বককে তরতাজা রাখতে মিস্ট খুব ভাল অপশন। বিশেষত যাঁদের প্রতিদিন এয়ারকন্ডিশনড রুমে থাকতে হয়, তাঁদের সবসময় মিস্ট ক্যারি করা উচিত। শুষ্ক ত্বকের অব্যর্থ সমাধান। একটা শসা বেটে তাতে ১ চা-চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১ টেবলচামচ গোলাপজল এবং একটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে মসলিন কাপড় বা চিজ় ক্লথ দিয়ে ছেঁকে নিন। ছেঁকে নেওয়া তরল স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। ত্বক শুষ্ক লাগলে বা দিনে ২-৩ ঘণ্টা অন্তর এই মিশ্রণ স্প্রে করে নিন।
চুল ভাল রাখুন:—
শুধু ত্বকের জন্যই নয়, চুল ভাল রাখতেও ব্যবহার করতে পারেন শসা। প্রতিদিন এক গ্লাস করে শসার রস খেতে পারেন। এতে শরীর থেকে টক্সিন ফ্লাশ আউট হবে। ফলে ত্বক এবং চুল ভিতর থেকে হয়ে উঠবে সুন্দর।
০১) হেয়ার রিন্স:– শসার রস বের করে অল্প জলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পু করার পর এই মিশ্রণ দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এটি নিয়মিত করতে পারেন। এতে চুল পড়া কমবে এবং চুল হয়ে উঠবে চকচকে, মসৃণ এবং সজীব।
০২) হেয়ার মাস্ক:– গরমকালে স্বাভাবিকভাবেই সুইমিং পুলে যাতায়াত বাড়ে। পাশাপাশি পুলপার্টি কিংবা ওয়াটার পার্ক দর্শন তো রয়েইছে। সেখানকার ক্লোরিন-মিশ্রিত জলে চুল শুষ্ক এবং নির্জীব হয়ে পড়া স্বাভাবিক। এর থেকে চুল বাঁচাতে একটি মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। একটা ডিম, ১ টেবলচামচ অলিভ অয়েল এবং অর্ধেক শসা একসঙ্গে বেটে নিন। এই মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ভালভাবে চুল ধুয়ে নিন। দেখবেন কয়েকদিনেই চুলের দশা ফিরেছে।
০৩) হেয়ার টনিক:– শসার হাই সিলিকন এবং সালফার কনটেন্ট চুলের গ্রোথ বাড়াতেও ভীষণ কার্যকরী। পুরো স্ক্যাল্পে শসার রস লাগিয়ে রাখতে পারনে। ১৫-২০ মিনিট রেখে আঙুল দিয়ে অলতো করে মাসাজ করে শিকাকাই দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply