বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫১ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি....
“সরকারের দিক-নির্দেশনা মেনে চলি, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করি।” অনলাইন নিউজ পোর্টাল “আজকের দিগন্ত ডট কম” এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাচ্ছি স্বাগতম , সর্বশেষ সংবাদ জানতে এখনই ভিজিট করুন “আজকের দিগন্ত ডট কম” (www.ajkerdiganta.com) । বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য পরিশ্রমী, মেধাবী এবং সাহসী প্রতিনিধি আবশ্যক, নিউজ ও সিভি পাঠানোর ঠিকানাঃ-- ajkerdiganta@gmail.com // “ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, আসুন আমরা মাদক’কে না বলি”
সংবাদ শিরোনাম....
সাভারে বিভিন্ন এলাকায় জরিমানাসহ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন ঠেকানো যাচ্ছে না গাজিপুরে অবৈধ গ্যাস সংযোগ, কঠোর অবস্থানে তিতাস কর্তৃপক্ষ শিবপুরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান গাজিপুরের বিভিন্ন এলাকায় পুনবায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন জোবিঅ-আশুলিয়া আওতাধীন কা‌শিমপু‌রে বি‌ভিন্ন এলাকায় তিতাসের অ‌ভিযান কাশিমপুরে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন কাশিমপুরে বিভিন্ন এলাকায় তিতাসের অভিযান এবং অভিযানকৃত সাশ্রয়কৃত গ্যাসের আনুমানিক মূল্য ৫১,৩৭৮ টাকা (দৈনিক ভিত্তিক)  মানিকগঞ্জ ঘিওরে বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ‘শহীদি মার্চ’ উপলক্ষ্যে ইবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল মানবতার ডাকে সাড়া দিলো ইবির সর্বস্তরের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা

ব্রাক্ষণবাড়িয়াকে নিয়ে উপহাস করার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি

ব্রাক্ষণবাড়িয়াকে নিয়ে উপহাস করার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি

 

জহির উদ্দিন বাবরঃ— বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে ব্রাক্ষণবাড়িয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ন একটি জেলা। ভৌগলিক অবস্হান, উর্বর মৃত্তিকা, নদী বন্দর, স্হল বন্দর, গ্যাস ফিল্ড, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ফার্টিলাইজার- সব মিলিয়ে অপূর্ব এক সম্পদের সমাহার এ জেলাটি যা সরাসরি সারা বাংলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখে। সারাদেশের মানুষ কে গ্যাস সরবরাহ করে সুখী করার অনন্য কাজটির সিংহভাগই করে ব্রাক্ষণবাড়িয়া। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মানুষ ইতিহাসবিদিত অতিথিপরায়ন, পরোপকারী, দেশপ্রেমিক, সাহসী, মানবহিতৈষী- এতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলার সাংস্কৃতিক রাজধানী ব্রাক্ষণবাড়িয়া। এখানে অনেক গুণী মানুষের জন্ম যারা অবদান রেখেছেন ভাষা আন্দোলনে, স্বাধীকার আন্দোলনে ও সংস্কৃতির অঙ্গনে।

গত শনিবার সকাল দশটার দিকে ইসলামী বিশ্লেষক, চিন্তাবিদ ও একজন জনপ্রিয় আলোচক মরহুম আল্লামা যুবায়ের আহমেদ আনসারী সাহেবের জানাজায় সমবেত হওয়া লাখো মানুষের ঢল কে কেন্দ্র করে যেভাবে আমার জন্মস্হান ও নিজ জেলা ব্রাক্ষণবাড়িয়া কে নিয়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ এমনকি দেশের উঁচু শ্রেনীরও কিছু মানুষ, যারা রাষ্ট্র ও সমাজের দর্পন হিসাবে আখ্যায়িত এমন কিছু উচু মানের মানুষও, আমরা যাদেরকে শ্রদ্ধা করি, তারাও দেখছি ট্রল করছে, স্যাটায়ার করছে, উপহাস বিদ্রুপ করছে এমনকি কেউ কেউ ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মানুষদের নিয়ে অকথ্য ও অশ্লীল ভাষায় গাল মন্দ করছে যা মোটেও সমীচিন নয়, যা তীব্র নিন্দার যোগ্য, যা মানুষের মনে আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধার অবলোপন করছে ও ঘৃনার উদ্রেক করছে। এ ঘটনাগুলো অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ঘৃনাযোগ্য। আমি তার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি।

আরও পড়ুনঃ আমাদের আরেকটু মানবিক হওয়া দরকার

শুরুতেই বলছি, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপরায়ন বা ধর্মভীরু। শুধু ব্রাক্ষণবাড়িয়া কেন, সমগ্র বাংলাদেশেই রয়েছে এরকম বড় বড় আলেমওলামা, মাশায়েখ। ৩৬০ আউলিয়ার দেশ বাংলাদেশ। সেই থেকেই হয়তো ধর্মভীরুতার পরম্পরা আজো চলছে।ধর্মভীরু বা খোদাভীরু হওয়াটা মোটেও দোষের নয়। দোষ হলো ধর্মান্ধতা বা গোড়ামী। এত বড় একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, আলোচক এবং তুমুল জনপ্রিয়তার শীর্ষে যার অবস্হান, তার জন্ম কিংবা বাড়ী বাংলাদেশের যে অঞ্চলেই হোক, এ জমায়েত হতোই। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মানুষ ধর্মান্ধ, কথাটা ঠিক নয়। যদি বলি, তবে বলতে হবে গোটা ইন্দো- পাক সাব- কন্টিনেন্টের মানুষই ধর্মান্ধ। ধর্মান্ধতা সেখান থেকেই এসেছে। ধর্মের ভিত্তিতেই ব্রিটিশ আমলে দ্বি- জাতি তত্ব এর ঘটনা এবং সে লক্ষেই হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান হয়। এককভাবে ব্রাক্ষণববাড়িয়া কে দোষছেন কেন ভাই? মানুষ মরনশীল। আজ কুয়াকাটার হুজুর কিংবা চরমোনাই এর হুজুর কিংবা আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী হুজুর মারা গেলেও Doubtlessly একই অবস্হা হবে। আল্লাহ তাদের হায়াত বৃদ্ধি করুক, একজন মুসলমান ও অহিংস মানব হিসাবে এটা আমার স্বভাবসুলভ প্রার্থনা। কিছুদিন পূর্বে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা আনোয়ার শাহ এর মৃত্যুতেও লাখে মানুষের ঢল নেমেছিল ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। তখন জনতার ঢেউ আর আজকের ব্রাক্ষনবাড়িয়ার জনতার ঢেউ অনেকটা একই রকম।প্রিয় এই হুজুর কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যে মানুষের ঢল নেমেছে, তাদেরকে কেউ এলান দিয়ে গণজমায়েত করেনি। খবরটি ছড়িয়ে পড়ায় আশে পাশের পাঁচ সাতটি টি জেলা থেকে লোকজন এসেছে, এমনকি অনেকে পায়ে হেটেও চলে এসেছেন। ঢাকা, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা এমনকি চাট্টোগ্রাম থেকেও লোকজন এসেছে। তাহলে কিছু মানুষ কেন এককভাবে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা ও এখানকার মানুষজন নিয়ে এমনভাবে ট্রল করছেন, এটা নিঃসন্দেহে পীড়াদায়ক ও অন্যায়। এটা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য ও কাম্য আচরন নয়। কিছু মানুষের ফেসবুক স্যাটায়ার যেন এখানকার গুণী মানুষকেও ছোট করে। এদেশের অসংখ্য গুণীজনের জন্ম ও নিবাস এই পবিত্রভুমি ব্রাক্ষনবাড়িয়ায়। তাই এটা ঠিক না ভাই। ভাল মন্দ সব জায়গাতেই আছে। আপনার এলাকায় কি নেই? কিন্তু আপনাদের কারো কারো উদ্ভট মন্তব্য গোটা ব্রাক্ষনবাড়িয়াবাসীকেই খাট করে।

প্রথমেই আত্নসমালোচনা করে নিই।

শনিবারের ঘটনাটি ছিল On the Spur of the Moment এবং একটি Momentum Circumstance.যেহেতু আজকের প্রেক্ষাপট টি ভিন্ন, পুরো দেশে তথা ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলায় লক ডাউন চলছে, জাতির ও মানবতার বৃহত্তর কল্যাণে এ লক ডাউনটি দেয়া হয়েছে, তাই সব উপস্হিত জনতাই লক ডাউন না মেনে, আইন অমান্য করে তাদের সীমাহীন দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। দেশটা তাদেরও। এই দেশের সব মানুষকে ভাল রাখা, ভয়াবহ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব, দেশের মানুষকে সুস্হ রাখার দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়।আমাদেরও, তাদেরও। তারাও এই ষোল কোটি বাংলাদেশী জনতার একাংশ। তাদের দ্বারা এ ভাইরাসটির সংক্রমণ জ্যামিতিক হারে আরো লাখো মানুষের মাঝে ছড়াবেনা, এ গ্যারান্টি কে দিবে? তখন এর দায় কে নিবে? যেহেতু সারা বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এই সামাজিক দুরত্বের কথা বলা হচ্ছে, আর এই সামাজিক দুরত্বই হলো তা প্রতিরোধের একমাত্র মাধ্যম, তাই গবেষক, চিকিৎসকরা এইটুকু কাজ করতে বলেছেন বিশ্ববাসী কে। আর এইটুকুই আমরা করছিনা? আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে কবে? আমি হুজুর কিংবা হুজুরের জানাজা নিয়ে কোন মন্তব্য করছিনা, যেহেতু তিনি একজন ইসলামী চিন্তাবিদ ও জনপ্রিয় আলোচক, তার জানাজায় ধর্মপ্রান মুসলমানদের ঢল নামবেই, এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, অতীতেও এমন হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। শুধু অস্বাভাবিক হলো এই দুঃসময় ও এই ক্রান্তিকালের প্রেক্ষাপট। এই প্রেক্ষাপটে জানাজার নামাজ সীমিত আকারে করা উচিৎ ছিল। প্রশাসন ও পুলিশ প্রানান্ত চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত লাখো মানুষের ঢল ঠেকাতে পারেনি। এককভাবে পুলিশ ও প্রশাসনকেও দোষ দিয়ে লাভ নেই। এ দায় আমাদেরও।জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ নিশ্চয় প্রানপন চেষ্টা করেছে। আগে থেকেই সম্মিলিত সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও ধর্মীয় সম্প্রদায় এর ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার সমন্বয় থাকলে হয়তো তা প্রতিহত করা যেত।কিন্তু এখন কি করবে পুলিশ? জানাযায়গামী ধর্মপ্রান মুসল্লিদের উপর গুলি চালাবে? তা কি উচিৎ হতো? তবে তো রাষ্ট্রব্যবস্হাকে বলা হতো স্বৈরাচারী অথবা অত্যাচারী? আরেক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হতো? উত্তেজনা স্পার্ক আউট হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তো। রাষ্ট্রের এত বড় ক্রান্তিকালের মধ্যের আরেক ক্যাটাস্ট্রফির জন্ম হতো। কোন পথে যাবে জেলা পুলিশ কিংবা জেলা প্রশাসন? যদি এই লাখো জনগন একসাথে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হতো, তবে অবস্হাটা কোথায় গিয়ে শেষ হতো? এইসব ভাবনার দোলাচলে আমার কাছে মনে হয়, এ দায় আমাদের সকলের, সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সকল স্তরের লোকজনেরই দায়িত্ব ছিল। যারা গিয়েছেন, তারা নিজেকে কিভাবে দায়মুক্ত করবেন? কারন এই লাখো মানুষের মধ্যেও কি একটিবারও এত বড় জাতীয় দুর্যোগের কথা কাজ করেনি। রাষ্ট্রপক্ষের এত নিষেধাজ্ঞার কথাও কি কাজ করেনি? মৃত্যুভয় ও ভয়ংকর করোনার থাবার কথা মনে পড়েনি? নাকি আপনাদের ধর্মীয় চেতনা ও আবেগী মন মৃত্যুভয়কেও পরোয়া করেনি। জানাযা তো আর হজ্ব থেকে বড় না। ইসলামের পাচঁটি স্তম্ভ এর অন্যতম একটি হলে হজ্ব। যুগে যুগে কালে কালে বিভিন্ন পট পরিবর্তন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও জিওপলিটিক্সের কারনে পবিত্র হজ্বও বন্ধ ছিল বহুবার, শুধু এক বছর না, একাধারে বহু বছরও। ইতিহাস তার স্বাক্ষ্য বহন করে। সেটিও করা হয়েছিল মানব কল্যানেই। মানব হত্যা, মহামারী, যুদ্ধ, অভাব, দারিদ্রতা এসব নানা কারনে মানুষের জীবনকে বাঁচাতে বিভিন্ন সময়ে হজ্ব সাময়িক সীমিতকরন কিংবা পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

লাইলাতুল বরাত, শুক্রবারের জুম্মা নামাজ সব কিছু মসজিদে গিয়ে পড়া সীমিতকরন করা হয়েছে, ইসলামি ফাউন্ডেশন নিষিদ্ধ করেছে- মানব জীবনের সুরক্ষার জন্যই, সুতরাং জাতির বৃহত্তর মঙ্গলের কথা ভাবা উচিৎ ছিল ধর্মপ্রান মুসল্লি ভাইয়েরা আমার। দেশের মানুষের কল্যানের জন্য কোন করা কিংবা কোন কার্য থেকে বিরত থাকাটাই স্বদেশপ্রেম যা ঈমানের অংগ। অতএব, তেমনিভাবেই মানব কল্যানেই এ গণসমবেত হওয়াটা থেকেই বিরত থাকা উচিৎ ছিল আপনাদের সকলের যারা গিয়েছেন, তাদের বলছি। আমি বিরুদ্ধচারন করছিনা। মরহুমের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সায়েন্স কখনোই কোরআন কে কন্ট্রাডিক্ট করেনা। যেহেতু সায়েন্স বলছে- সামাজিক দুরত্ব ও সঙ্গরোধ করার কথা। তাই এটা না মেনে আপনারা যে অদৃশ্য ক্ষতি করেছেন, না জানি কত সহস্র মানুষের মাঝে ছড়াবে এই করোনা ভাইরাস। না জানি, কত জন এখানে এসে নিজ গৃহে নিয়ে গেছেন এই ভাইরাস। তাহলে এতদিন ধরে লকডাউন রাষ্ট্রের ব্যবসা, বানিজ্য ও অর্থনীতির এত হাজার কোটি কোটি টাকা লোকসান দিয়ে কি লাভ হয়েছে? এতদিন লক ডাউন দিয়ে যেটুকুই প্রতিরোধ সম্ভব হয়েছিল, তা আবার মিশায়ে দিয়েছে এ জনস্রোত। হ্নদয়ের ভালবাসা আবেগকে স্যাক্রিফাইজ করা উচিৎ জাতির ও মানবতার বৃহত্তর কল্যানে। কোয়ারেন্টাইন শব্দটির মূল ধারনা যেহেতু সর্বপ্রথম বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর নিকট থেকেই এসেছে, সেই থেকেই বিশ্বব্যাপী আজ এই কোয়ারেন্টাইন। বিজ্ঞান কখনোই মহাগ্রন্হ আল কোরআনের উপরে নয়। আমাদের মহানবী (সা:) এর দেয়া ফর্মুলাই আজ বিশ্বব্যাপী পালিত কোয়ারেন্টাইন।

আরও পড়ুনঃ আমাদের অজ্ঞতার মাশুল কে দিবে?

মানবকল্যাণ সব ধর্মেরই মূল লক্ষ্য। যুগে যুগে সব ধর্মেই মানব কল্যাণ সাধনের জন্য সর্বোচ্চ স্যাক্রিফাইজ করেছে। আর ইসলাম তো শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইন্নাদ্বিনা ইন্দাল্লাহাল ইসলাম। আর এই শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম কখনোই তার পালনীয় কর্তব্যগুলোকে কঠিন করে নাই। মানু্ষোর জন্য কঠিন হবে, এমন কোন কাজই ইসলাম আমাদেরকে করতে বলেনাই। আমরা সবাই দেখেছি এবং মেনেছি, গত কিছুদিন পূর্বে ইসলামের পবিত্র রজনী লাইলাতুল বরাতের ইবাদত আমরা নিজ গৃহে পালন করেছি। রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা ছিল মসজিদে না জমায়েত না হওয়ার জন্য। এই নিষেধাজ্ঞাটুকু জাতি হাসিমুখে মেনেছে কারন তা ছিল জাতির সুরক্ষার জন্যই। দেশপ্রেম যেমন ঈমানের অঙ্গ, তেমনি রাষ্ট্রীয় আইন মানাও দেশপ্রেমের অঙ্গ। তাই পরহেজগার ধর্মপ্রান মুসলমানদের উচিৎ ছিল এই রাষ্ট্রদেশটুকু মানা। আবেগের বশবর্তী হয়ে যেভাবে সমবেত হয়েছেন, না জানি ভিতরে ভিতরে কতটা সর্বনাশা সংক্রমণ ছড়িয়েছেন গোটা দেশে সেই সাথে আপনাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ পরিবারকেও। এই মানুষগুলোই প্রত্যেকে জানাযা শেষে নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করবেন, নিজের অলক্ষেই, অজান্তেই আক্রান্ত করে দিবেন নিজের জন্মদাতা মা, পরম প্রিয় বৃদ্ধ বাবা, কলিজার টুকরা সন্তান কিংবা প্রিয় ভাইবোন অথবা প্রিয়তমা স্ত্রী কেও। আপনার ঘরে থাকা মানুষগুলোর কি দোষ ছিল? আল্লাহ সবাইকে রক্ষা করুক।

যেহেতু এ ভাইরাস ঈমানদার, মুসল্লী, বেঈমান, কাফির, মুশরিক, নাপিত, মুচি, বড়লোক, গরীব, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, রাজা রানী কাউকেই চিনেনা, সেহেতু এ জমায়েতে কারো কোন ক্ষতি হবেনা- এ গ্যারান্টি কে দিবে?

অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে গেল বাংলাদেশের মানুষের যার মাশুল দিতে হবে তিলে। সচেতনা ও আত্নসংযম কোন দোষ না। আর সচেতনতার কথা যারা বলে তারাও দোষী না। দয়া করে, আত্মউপলদ্ধি করুন। এ বোধটুকু জাগ্রত করুন নিজের ভিতরে। আমরা, শুধু নিজের উপর পড়লেই বুঝি, নিজের মস্ত বড় ক্ষতিটা হয়ে গেলেই এরপর আমাদের বোধটুকু জাগে। তার আগে নয়।

এবার আসি ট্রলকারী দের কথায়। আসলে আমরা কখনোই আত্নসমালোচনা করতে জানিনা। শুধু জানি পরের দোষটা জাগিয়ে তুলতে ও ইচ্ছেমতো উপহাস করতে। এ স্বভাব আমাদের চিরন্তন। যেভাবে উৎসবে মেতে উঠেছেন আপনারা কতিপয় নিন্দুকেরা ব্রাক্ষণবাড়িয়াকে নিয়ে, একবার ভাবুনতো এ সমালোচনার কোন কাজই কি আপনার জেলার কেউ করেনা? বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে যখন সারা বিশ্ব হাতের মুঠোয়, তখন কিভাবে এ মানুষগুলি আমাদের কে জেলায় জেলায় বিভক্ত করে দেয়? এত বিভাজন, এত উপবিভাজন কেন? ব্রাক্ষণবাড়িয়াকে কেন বাংলাদেশ থেকে আলাদা করে দেখছেন? এটাতো বাংলাদেশেরই একাংশ। আপনাদের ট্রল দেখে মনে হচ্ছে আপনাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ জমে ছিল ব্রাক্ষণবাড়িয়ার প্রতি। অবশ্য একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ব্রাক্ষণবাড়িয়ার জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এটা তার আত্ন উপলদ্ধি। এরকম আত্ন অনুশোচনাকে সাধুবাদ জানাই।

তিতাস বিধৌত এ উর্বর জনপদে যে বর্বর মানুষ নেই, তা বলবোনা। কিছুদিন আগে নবীনগরে একজনের পা কেটে কাটা পা নিয়ে যে আনন্দ মিছিল হয়েছিল, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছিল। তার সমালোচনায় মুখর হয়েছিলাম আমরা ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মানুষেরাই। কিছুদিন আগে করোনা ক্রান্তিকালেও ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সরাইলে যে ঝগড়া টি হয়েছিল তাও এক বর্বরোচিত অধ্যায়।

তবে তাই বলে ঢালাওভাবে ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সব মানুষজন নিয়ে এরক জেনেরিক মন্তব্য ও কুরুচিপুর্ন মন্তব্য ও গালি প্রদান করাটা খুবই আপত্তিকর ও দুঃখজনক। কারন ব্রাক্ষনবাড়িয়া অনেক গুণীজনের পূন্যভুমি।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের গড়ে তোলা প্রতিরোধের দুর্গের অন্যতম ব্রাক্ষনবাড়িয়া।

জগৎবিখ্যাত আলেম ও বুজুর্গ ফখরে বাঙ্গাল মরহুম হযরত মাওলানা তাজুল ইসলাম (রহ:) এর জন্ম, বাড়ি ও রওজা মোবারক এই ব্রাক্ষণবাড়িয়াতেই।

ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে বিপ্লবী উল্লাস কর দত্তের বাড়ি এই ব্রাক্ষণবাড়িয়াতে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জোরালো দাবী উত্থাপন করেন পাকিস্তান এসেম্বলীতে ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যার বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়াতে।

শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের সঙ্গীত জগতের একজন পুজনীয় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ এর জন্ম ব্রাক্ষণবাড়িয়াতে।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতীয় বীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা আব্দুল কুদ্দুস মাখনের বাড়ী ব্রাক্ষণবাড়িয়া। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউরা এর মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামে সম্মুখ সমরে নিহত হন।তার সমাধিও এখানে।

ব্যারিস্টার এ রসূল কলকাতা হাইকোর্টের অন্যতম আইনজীবি এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এর অন্যতম সদস্য ছিলেন যার বাড়ী ব্রাক্ষনবাড়িয়াতে। ভাষাসৈনিক অলি আহাদের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়া। অদ্বৈত মল্লবর্মন ও কবি আল মাহমুদের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়া। অর্থনীতিবিদ ডঃ আকবর আলী খান এর বাড়ি ব্রাক্ষনবাড়িয়া।

এত এত গুণী মানুষের জন্মভুমি ব্রাক্ষণবাড়িয়াকে নিয়ে আপনাদের মনগড়া বক্তব্য ও তীর্যক ও বিদ্রুপাত্নক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। চিন্তার পরিসর বড় করুন। ঠুনকো মানসিকতাকে পরিহার করুন। মাতৃভুমির মানুষের কল্যাণের কথা ভাবুন। সংকীর্ন বিভাজন ও উপবিভাজন নিয়ে ব্যস্ত না থেকে সমগ্র দেশের মানুষকে এক জাতি হিসাবে দেখুন।

বর্বরতা, পাষন্ডতা, নির্মমতার অনেক ঘটনা থাকলেও এ ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে অনেক রত্নও বের হয়। অনেক মনীষির জন্ম হয়। ভাল মানুষ ও মন্দ মানুষের সমন্বয়েই একটা জনপদ গড়ে উঠে। সব এলাকাতেই এরকম সমন্বয় থাকে। সংমিশ্রন ঘটে অনেক বৈপরীত্যের ও সমর্থনের। প্রতিটা ঘটনার দুটো প্রপঞ্চ থাকে। একটা ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করার আগে ঘটনার দুটো প্রপঞ্চই বিবেচনায় আনা উচিৎ।

একজন ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাগরিক হিসাবে আমি গর্ববোধ করি। যা ঘটে গেল তা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। ভয়ানক দুর্দিন আসছে সামনে, যেভাবে উর্ধগামী হচ্ছে করোনা আক্রান্তের গ্রাফ, তা তে ভয় হচ্ছে কী আছে এ জাতির ললাটে। তাই পরের দোষ খোজাখুজির চেয়ে নিজে দায়িত্ববান হই।নিজেই গড়ে তুলি নিজস্ব প্রতিরোধ।

যার মস্তিষ্কে এখনো পরচর্চা আর কাঁদা ছুড়াছুড়ির মনোভাব কাজ করে, তার দ্বারা কি করে সার্বজনীন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব? ঢালাওভাবে এ জেলার সব মানুষকে দোষারোপ করা উচিৎ নয়। এ জেলার প্রত্যেকটি মানুষকে অপমান করেছেন আপনারা, কষ্ট দিয়েছেন এখান গুণী মানুষদেরও। আপনাদের স্বীয় কটুক্তির জন্য লজ্বিত হওয়া উচিৎ। ভুল ত্রুটিতে ভরা আমাদের এই মনুষ্য সমাজ। আমরা কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়। আর এ ঘটনাটি কোন পরিলল্পিত ঘটনা নয়। যেহেতু মানুষের আবেগের একটা চরম আউটবার্স্ট ছিল এ লোক জমায়েত, মানুষ পিক আপ, মিনি ট্রাকে করে দুর দুরান্ত থেকে এসেছে, আগে থেকে বুঝা গেলে সমন্বিত প্রচেষ্টায় হয়তোবা ট্যাকল করা সম্ভব হতো, কিন্তু প্রশাসন ও পুলিশ বুঝে উঠার আগেই এত বড় সমাবেশ জমায়েত হয়ে গেল। এরপর যা হয়েছিল, তা ছিল নিয়ন্ত্রনের বাইরে। কিন্তু যা ঘটে গেছে, তার সমাধান কি করে সম্ভব, আসুন সে চেষ্টায় ব্যস্ত হই। এই অপুরনীয় ক্ষতির মাশুল দিয়ে শেষ করতে পারবেনা বাংলাদেশ। এ দায় আমাদের সকলের। পুরো বাংলাদেশ মিলে আজো আমরা সচেতন করতে পারলাম এদেশের এতগুলি মানুষকে। বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিল আর লাশের পর লাশও কাবু করতে পারেনি এ জনগোষ্ঠীকে। তাহলে কে পারবে? কে রুখবে মানুষের এই আত্নঘাতী জনস্রোতকে?

লেখক :
প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

খবরটি শেয়ার করুন....



Leave a Reply

Your email address will not be published.



বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন

করোনা ইনফো (কোভিড-১৯)

 

 

 

 

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০২ পূর্বাহ্ণ
  • ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ
  • ১৫:৩৬ অপরাহ্ণ
  • ১৭:১৫ অপরাহ্ণ
  • ১৮:৩১ অপরাহ্ণ
  • ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

জনপ্রিয় পুরাতন হিন্দি গান

জনপ্রিয় বাউল গান

[print_masonry_gallery_plus_lightbox]




জনপ্রিয় পুরাতন বাংলা গান

সর্বশেষ সংবাদ জানতে



আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”।  অনলাইন নিউজ পোর্টালটি  বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
Shares
x