বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৩ অপরাহ্ন
গাজীপুর থেকে সাইফুল আলম সুমনঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের বাগানে কাঁঠালের প্রচুর ফলন হয়েছে। িশ্রীপুরের কাঁঠালের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। তাই এখানকার কাঁঠালের চাহিদা দেশের অন্য এলাকার তুলনায় একটু বেশি। বন্যার ঝুঁকি না থাকা এবং মাটির উর্বতার কারনে শ্রীপুরে কাঁঠালের ফলন বেশি ও সুস্বাদ। কাঁঠাল দ্রুত পঁচনশীল হওয়ায় কোনো কোনো সময় লাভের চেয়ে ক্ষতির অঙ্ক কষতে হয় বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের। আর এ কারণেই কাঁঠাল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দীর্ঘদিনের দাবি এ এলাকার কাঁঠাল বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের। সরকারি-বেসরকারি কোনো পন্থায় প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় বাগান মালিকেরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ এলাকায় সংরক্ষণাগার স্থাপন করা গেলে কাঁঠাল চাষে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়া যেতো। কাঁঠাল চাষের আলাদা যন্ত্র ও খরচ না থাকায় অল্প বিনিয়োগ লাভজনক আবাদ হিসেবে সাফল্য পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকেরা। কাঁঠাল বাগানের মালিকরা জানিয়েছে বাগানগুলোতে এবার কাঁঠালের বাম্পার ফলন হলেও দাম ও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। বাগান মালিকেরা বলছেন উৎপাদিত কাঁঠালের বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। তারা অভিযোগ করেন দীর্ঘদিনেও সরকার বিদেশে কাঁঠালের বাজার সৃষ্টি করতে না পারায় সম্ভাবনাময় একটি কৃষিখাত ধ্বংস হতে চলেছে।
মহামারী করোনা কালে বাগান মালিকেরা উপযুক্ত দামে কাঁঠাল বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে যেসব ব্যবসায়ী বাগান কিনেছেন তারাও দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাঁঠাল পাঠাতে পারছেন না ।
জাতীয় ফল কাঁঠাল। শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকার কাঁঠাল বাগান মালিকদের গাছে কাঁঠাল ঝুলে রয়েছে। উপজেলার হাট বাজারগুলোতে পাকা কাঁঠাল উঠতে শুরু করেছে। এখানকার অধিকাংশ কাঁঠাল গাছগুলো বাগান ভিত্তিক না হলেও বাড়ীর আঙিনায়, রাস্তার দু’ধারে, স্কুল, কলেজের চত্তরে প্রচুর কাঁঠাল গাছের দেখা মেলে। আর এসব গাছে ঝুলে থাকা কাঁঠলের দৃশ্য অনেকের নজর কাড়ে। চারা লাগানোর পর সাধারনত এর কোন যতœ নেয়া হয় না। ঝড়ে যাতে ভেঙ্গে না পড়ে তার জন্য বড়জোর একটা খুঁটি ও খাঁচা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাঁঠালের চারা আপনা থেকেই বেড়ে উঠে। এক কথাই অনাদর আর অবহেলায় বন-বাদারে বেড়ে উঠে ফলের রাজা জাতীয় ফল কাঁঠাল।
তেলিহাটি ইউনিয়নের কাঁঠাল বাগান মালিক কায়সার মৃধা খোকন বলেন, অন্যান্য ফল ও গাছ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যত তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় কাঁঠাল নিয়ে তার সিকি ভাগও হয়না। কোন কোন পরিবার ফল মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি করে সারা বছরের আয় করে। ২ থেকে তিন মাস কাঁঠালের ভরা মৌসুম এসময় পাইকার ও শ্রমিক শ্রেনীর লোকদের বাড়তি আয়ের সুযোগ হয় । এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কাঁঠালের ভাল ফলন হয়েছে। তবে ফলন বেশি হলে দাম না পাওয়ার আশংকাও রয়েছে। কারণ বেশি ফলনে দাম পড়ে যাওয়ার রেওয়াজও রয়েছে।
টেপির বাড়ী গ্রামের কাঁঠাল বাগান মালিক তাইজুদ্দিন বলেন, তার কাঁঠালের দুটি বাগান রয়েছে। প্রতি বছর তিনি প্রায় ৩ লাখ টাকার কাঁঠাল বাগান বিক্রি করেন। ফলন ভালো হওয়ায় এবার গত বছরের চেয়ে এবার বেশি দাম পাওয়ার আশা করছেন। কিন্তু, করোনার কারনে সঠিক দাম ও বিক্রি নিয়ে টেনশন হচ্ছে। উপজেলার গাজীপুর গ্রামের বাগান মালিক আব্দুর রহমান জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর বাগানে অনেক বেশি কাঁঠাল ধরেছে। তিনি প্রতি বছর প্রায় লাখ টাকার কাঁঠাল বাগান বিক্রি করেন। এ বছরও ফলন বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু করোনাকালে কাঁঠাল নিয়ে বিপাকে আছেন।
উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের কোড়লপাড়া গ্রামের বাগান মালিক আব্দুর রউফ জানান- এ বছর কাঁঠালের ফলন খুবই ভাল হয়েছে তবে বাজারে দাম একেবারেই কম। কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি হওয়ার কথা সেখানে ২০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। লোকসানের কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান কাঁঠাল আগের মত বিনা চর্চায় এখন আর হয় না। ফলে কাঁঠালের উৎপাদন খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুন।
কেওয়া গ্রামের বাগান মালিক নূরুল আলম বিএসসি বলেন, করোনার কারণে কাঁঠালের দাম কম। শতাধিক কাঁঠাল গাছ রয়েছে তার। অন্যান্য বছরের মতো এবছর বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারী না আসায় কাঁঠালের উপযুক্ত দাম পাওয়া যাচ্ছে না। সড়কে পর্যাপ্ত পরিবহন না চলার কারণে কাঁঠাল বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গাছের কাঁঠাল গাছেই পেকে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছি। তাছাড়া, এলাকায় কোন কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করার বাবস্থা না থাকায় তারা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অবিলম্বে অত্র এলাকায় একটি কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত ব্যবস্থ্য গড়ে তুললে এ উপজেলার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে বলে মন্তব্য সচেতন মহলের।
গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও গাজীপুরে কাঁঠালের এলাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৯হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হচ্ছে। গত বছর ছিল ৯ হাজার ৩ ৬৬ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ২’শ ১০ মে.টন। গাজীপুরের মধ্যে শ্রীপুর উপজেলায় কাঁঠালের এলাকা বেশি। কাঁঠালটাকে গাজীপুরে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। “সবুজে শ্যামলে ভরপুর মিষ্টি কাঁঠালে ভরপুর।” কাঁঠালের ঔতিহ্য রক্ষার জন্যই এ ধরনের শ্লোগান ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাঁঠালের আবাদ করতে গেলে যে কোনো ফলেরই কিছু সমস্যা থাকে। তার প্রতিকারের ব্যবস্থাও আছে। কাঁঠালেরও সেরকম কিছু রোগ ব্যাধি থাকতে পারে। সেটার যথাযথ ব্যবস্থাপনাও আছে। বিগত বছরগুলোতে আমরা বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি বিশেষ করে “গামোসিস” বা “আগামরা” রোগের বিভিন্ন বিষয়ে আমরা কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়েছি। সেখানে আমরা বোর্ডোক্স মিক্সচার (ইড়ৎফবধীঁ সরীঃঁৎব) মিক্সচার লাগানোর পরামর্শ দিয়েছি। তাতে এই রোগটা আস্তে আস্তে কমে আসছে এবং এ বছর কাঁঠালের ফলন আরও অনুকূলে থাকায় কৃষকদের লাভ হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি। আমরা আশা করছি কৃষক কাঁঠালের উপযুক্ত দামও পাবে।
তিনি বলেন, যেসব কৃষক উপযুক্ত দামে কাঁঠাল বিক্রি করতে পারবেন না তারা স্থানীয় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে অন্যত্র কাঁঠাল সরবরাহের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও সহযোগিতা করবেন।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply