রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২১ পূর্বাহ্ন
গাজীপুর থেকে সাইফুল আলম সুমনঃ— গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই লাল সবুজ পতাকার রঙের সমারোহ। কোথাও সারিবদ্ধ সবুজ বনের ভেতরে রাস্তার পাশেই দেখা মিলছে লাল সবুজ পতাকার গাড় রঙে রাঙানো বিদ্যালয় ভবন। সবুজ বনের ভেতর এমন রাঙানো বিদ্যালয় ভবনগুলো যে কোনো পথচারীকে বিমোহিত করবে।
বিদ্যালয়গুলোর লাল সবুজের সমারোহ মাঠের শুরু থেকে শ্রেণী কক্ষ পর্যন্ত। এমন পাঠশালা পেয়ে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা উচ্ছসিত। প্রকৃতির রঙের সাথে স্কুল ভবনের একখন্ড লাল ও সবুজের মিশ্রণ একেবারেই নতুন। এ দৃশ্য কোমলমতি শিশুদের চমকে দিয়েছে। পাশাপাশি দর্শণার্থীরাও বিমোহিত। আর শহুরে এলাকায় হরেক রকম রঙের ভীড়ে লাল সবুজ যেন প্রকৃতির আভাস দিচ্ছে। কোমলমতি শিশুরা তাদের বিদ্যালয় আঙিনায় উচ্চস্বরে আওয়াজ তুলে সকলে একই কন্ঠে এখন বলে, আমার পাঠশালা, আমার রাষ্ট্রীয় ঠিকানা।
গত এক মাসে শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের গাড়ারন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেলিহাটী ইউনিয়নের বেকাসাহরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনসহ প্রায় সকল বিদ্যালয় ভবনগুলো রাঙানো সম্পন্ন হয়েছে। অনেক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনও চলছে শেস মুহুর্তের রাঙানো।
বেকাসাহরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিথিলা জানায়, বাড়ির পড়া শেষ করে কখন স্কুলে যাওয়ার সময় হবে সেই অপেক্ষায় থাকি। তার সহপাঠী হোসনে আরা হিমু জানায়, আগেও স্কুলে ভাল লাগত, কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে। আগে বিদ্যালয়ের বিশেষ কোনো রঙ ছিল না। এখন স্কুলে গিয়ে যেদিকে তাকাই সেদিকেই যেন জাতীয় পতাকা দেখতে পাই। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আকিবুল হাসান জানায়, জাতীয় পতাকার রঙে এখন আমাদের পাঠশালা রঙিন। একই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস মেঘলা জানায়, আমি আমাদের জাতীয় পতাকাকে সম্মান করি। আর সেই আদলে বিদ্যালয়ের রঙ এখন রঙিন হওয়ায় সম্মান আরও বেড়ে গেছে। আনন্দে উচ্ছসিত তার সহপাঠী মো. নাদিম জানায়, আমাদের বিদ্যালয় আমাদের রাষ্ট্রীয় ঠিকানা।
প্রাথমিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফজলুল হক বলেন, জাতীয় পতাকার রঙে বিদ্যালয়ের রঙ হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা আরেক ধাপ কোমলমতি শিশুদের আরেক ধাপ সমৃদ্ধ করেছে। বেকাসাহরা বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবক এবং এলাকাবাসীরাও ভীষণ খুশি।
গাড়ারন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুল লতিফ মন্ডল বলেন, জাতীয় পতাকার রঙটি কোমলমতি শিশুদের বেশী আকৃষ্ট করে। শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করে তুলতে এটি একটি অনন্য উদ্যোগ। গাড়ারন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাজেদা পারভীন বলেন, জাতীয় পাতাকার রঙে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রাঙানোর ফলে বিদ্যালয় পরিবেশ সম্পূর্ণ নতুন রূপ পেয়েছে। আর শিক্ষার্থীরা নতুন পরিবেশ পেয়ে বেশ উচ্ছসিত।
বেকাসাহরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, বিদ্যালয়ের রঙের পাশাপাশি এর পরিবেশটাও রঙিন হয়ে উঠেছে। পরিবেশের সাথে সম্পর্কযুক্ত এ বিদ্যালয়টিও লাল সবুজের রঙে নতুন এবং উন্নত পরিবেশ পেয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই মুগ্ধ।
প্রাথমিক শিক্ষক কবির হোসেন বলেন, এলাকাবাসী দেখছে তাদের সন্তানেরা এখন লাল সবুজ ভবনে পড়ালেখা করছে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং পতাকার চেতনা কোমলমতি শিশুদের আকৃষ্ট করেছে।
শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, শ্রীপুর উপজেলায় মোট ১৬৬টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আগে বিদ্যালয়গুলো একেকটি একেক রঙে রাঙানো ছিল। লাল সবুজের পতাকার রঙে বিদ্যালয় ভবন রাঙানের উদ্দেশ্য হলো স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক জাতীয় পতাকার মাধ্যমে শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগানোয় উৎসাহিত করা। বিদ্যালয় ভবনের এ রঙ কোমলমতি শিশুদের মনে সামান্যতম হলেও দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলবে। ভবন রাঙানো এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল বিদ্যালয়েই এর কাজ শেষ হবে। প্রতি বছর বিদ্যালয় উন্নয়ন ও সংষ্কারের জন্য কিছু বরাদ্দ দেয়া হয়। এ বছর ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বরাদ্দের বাইরেও এলাকার সুধীজনের আর্থিক সহায়তায় বিদ্যালয়গুলো জাতীয় পতাকার রঙে রাঙানো হচ্ছে।
গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, মনে দেশপ্রেম থাকলেও তার একটি বহিঃপ্রকাশ প্রয়োজন। আর সে প্রয়োজন থেকেই বঙ্গবন্ধুর সোনারবাংলা গঠনে লাল সবুজের রঙে সরকারী শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাঙানো হচ্ছে। এতে শিশুরা বিদ্যালয়ে যাতায়াতে উদ্ধুদ্ধ এবং উপস্থিতির হার বাড়ছে। তাছাড়া শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়দের মধ্যে দেশপ্রেম লালনের একটি বিষয় স্থায়ী হয়ে থাকবে।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply