বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল রায়ঃ— ভারতের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম হল কোনারকের সূর্য মন্দির। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এবং ইউনেস্কো কোনারকের সূর্য মন্দির কে এক বিশেষ মযার্দা প্রদান করেছেন। এই মন্দির কালোপাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে বলে, উইরোপিয়ানরা একে “ব্লাক প্যাগোডা” বলে থাকে।
পুরীর হোটেল থেকে বেরোলাম, কোনারকের উদ্দেশ্যে। পুরী থেকে দুরত্ব মাত্র ৩৫ কিঃমিঃ। এরপর আমরা “রামিচন্ডী মন্দির” এবং “চন্দ্রভাগা বীচ” দর্শন করে প্রায় ১১টা নাগাদ কোনারক মন্দির পৌছালাম। এক সময় কোনারক সূর্য মন্দিরের পাশ দিয়ে সমুদ্র বয়ে যেত। কিন্তু আজ কালের স্রোতে সমুদ্র অনেক দুর সরে গেছে, রয়ে গেছে ঝাউবন আর কাজুবনতের শতাব্দীতে গঙ্গা রাজবংশের রাজা নরসিংহদেব চন্দ্রভাগা সমুদ্রের তীরে রথেরআদলে তৈরি করেন কোনারকের সূর্য মন্দির(১২৩২-১২৫৫ খীষ্টাব্দে)। কোন শব্দের অর্থ কোন বা কোনা এবং অর্ক শব্দের অর্থ সূর্য।এই দুটি শব্দের মিলিত অর্থ কোনার্ক বা কোনারক। ১২ একর জমির উপর প্রায় ১২০০ শ্রমিকের নিরলস প্রচেষ্টায় ৪০ কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যায়ে তৈরি হয় এই মন্দির।
আমরা গাড়ি থেকে নেমে ধীরে ধীরে সূর্য মন্দিরের দিকে এগিয়ে চললাম। প্রবেশ মূল্য ৪০ টাকা জন প্রতি। টিকিট কেটে আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম।এখন যে অংশটি আমরা দেখতে পাই, সেটি মূল মন্দিরের প্রবেশ পথ। মূল মন্দিরটি নাম ছিল বিমান। এখন যেটি দেখতে পাই, নাম হলো জগমোহন। এ ছাড়া রয়েছে নাট মন্দির, ভোগ মন্দির এবং সূর্যের দুই পত্নী ছায়া এবং সংঘার মন্দির।
সাধারনত তিন ধরনের পাথরের দ্বারা এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল।(ল্যাটেরাইট, ক্লোরাইট, খন্ডালাইট) বেলেপাথর, গ্রানাইট ও চুনাপাথরের দিয়ে তৈরি হয় এই মন্দির। মন্দিরটির সামনে রয়েছে সাতটি ঘোড়া। এই সাতটি ঘোড়া সপ্তাহের সাতটি বারের প্রতীক ও রামধনুর (সূর্যের) সাত রংয়ের প্রতীক। মন্দিরের দু’পাশে বারো জোড়া চাকা রয়েছে। প্রত্যেকটি চাকার ব্যাসার্ধ 8 মিটার। এক একটি চাকায় আটটি করে দাঁড় আছে। আটটি দাঁড়ে অষ্টপ্রহর নির্ধারিত হয়। বর্তমানে দু’টি চাকা বাদে সব চাকা গুলোই নষ্ট হয়ে গেছে। দু’টি চাকায় আজও সঠিক সময় দিয়ে আসছে। এই মন্দিরের চূড়ায় একটি শক্তিশালী চুম্বক ছিল। ওলন্দাজ জলদস্যুরা চুম্বকের টানে পথ ভ্রষ্ট হয়ে পড়ত। ফলে তারা চুম্বক টিকে ধ্বংস করে দেয়। কোনারক মন্দিরের ভাস্কর্য ও তার বিঞ্জান ভিত্তিক বাস্তুকলা আজও মানুষকে আকৃষ্ট করে এবং শিল্প সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এখানকার ভাস্কর্য আট থেকে আশি সকলকেই আকৃষ্ট করে। এই মন্দিরে তিনটি সূর্য মূর্তি ছিল। বর্তমানে ভগ্নদশায় একটি এখনও মন্দিরে অবস্থান করছে। আর বাকি দুটো মূর্তি পাশের মিউজিয়াম বা সংরক্ষণ শালায় রাখা আছে।
কথিত আছে মন্দির অভিষেকের আগের দিন, প্রধান পুরোহিতের ছেলে মন্দিরচূড়ায় কলস স্থাপন করতে গিয়ে উপর থেকে পড়ে মারা যান। সেই অভিশাপে এই সূর্য মন্দিরে কোন দিন পূজা হয়নি। এই মন্দির অভিশপ্ত আজও।
নানা সময় কখন মুসলমান নবাব কালাপাহাড়, মারাঠা রাজত্বে মারাঠারা। আবার পর্তুগিজ ওলন্দাজ সেনারা সূর্য মন্দিরের উপরে বারে বারে আক্রমণ করার ফলে ক্রমশই ধ্বংস প্রাপ্ত হতে থাকে। আঠারো শতকে এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে এই মন্দিরটি বালি চাঁপা পড়ে যায় এবং জায়গাটি জঙ্গলে ভরে যায়।১৯০৪ সালে ইংরেজ লাটসাহেব লর্ড কার্জনের নেতৃত্বে একদল পুরাতাত্ত্বিক এই মন্দির উদ্ধার করেন।
প্রতি ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক নৃত্যৎসব এই মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রাতে এখানে লাইট এন্ড সাউন্ড হয়ে থাকে। এখন ও যেটুকু রয়েছে তা খুটিয়ে দেখতে এক দিনে হবে কিনা সন্দেহ আছে। যাই হোক প্রায় ২ ঘন্টা ধরে দেখার পর মনে হল, দেখার চেয়ে অদেখা রয়ে গেল বেশি। কিছু জানা এবং বেশি নাজানার অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে প্রায় ২.৩০ নাগাদ আমরা কোনারক থেকে বেরিয়ে ভূবেনেশ্বরে দিকে রওনা হলাম।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply