বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ অপরাহ্ন
আজকের দিগন্ত বিশেষ প্রতিনিধিঃ— মহররাম শব্দের অর্থ হল অলঙ্ঘনীয়পবিত্র । পৃথিবী সৃষ্টি হতে ১০ই মহররম তথা আশুরা একটি বিশেষ ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়ে আসছে । মহররম হিজরী বছরের প্রথম মাস । অনেক গুলো কারণে এই মহররম মাসটি পৃথিবীর মুসলিম উম্মার নিকট অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ । স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (সাঃ) নিজেও এ মাসকে গুরুত্বের সাথে বর্ণনা করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সারা জীবন মানব কল্যাণে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন । মহররম মাসের ১০ তারিখ সমগ্র মুসলিমদের নিকট পবিত্র আশুরা নামে পরিচিত । মুহররম ও আশুরা শব্দটি শুনার সাথে সাথে আমাদের মনে পড়ে এক ভয়ংকর, বীভৎস. নিষ্ঠুর, নির্মম ও ইসলামের ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক ঘটনা ।
প্রিয় নবী রাসূল্লাহ (সাঃ) এর কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর আদরের নয়নমনি হযরত হোসাইন এর কারবালার প্রান্তরে শাহাদাৎ বরণের ঘটনা যা পৃথিবীতে একটি করুণ ইতিহাস । সমগ্র দুনিয়ার সকল মুসলিম নরনারী ধর্মীয় রীতিনীতির মাধ্যমে দিনটিকে মর্যাদার সহিত স্বরণ করে । হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওয়াতের মাত্র পঞ্চাশ বছর পর ফোরাতের তীরে কারবালার প্রান্তরে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় দৌহিত্র (নাতী) হযরত হোসাইন (রাঃ) এর পরিবার ও তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে মোয়াবিয়া এর পুত্র ইয়াজিদের হাতে শাহাদৎ বরণ করেন । কারবালার প্রান্তের ট্র্যাজেডির পরে ইসলাম নবরুপে আতœপ্রকাশ করে বলে ইসলামী স্কলারদের বিশ্বাস ।
ইসলামের ইতিহাসে ১০ই মহররম দিনটি অনেকগুলো কারনে গুরত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়ালা এই দিনে আসমান ও যমিন তৈরী করেছিলেন। হযরত আদম (আঃ) কে পৃথিবীর প্রথম মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছিল। আল্লাহ তার নবীদেরকে শত্রæর হাত হতে রক্ষা করেছেন এই ১০ই মহররম দিনটিতে। সেই সাথে এই দিনটিতে নবীদের শত্রæদের আল্লাহ ধবংস করে দিয়েছেন। মুসা (আ:) এর শত্রæ ফেরাইনকে নীল নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়, হযরত ঈসা (আঃ) কে আল্লাত তায়ালা উধর্বাকাশে উঠিয়ে নিয়েছিলেন । হাদিস শরীফে আছে যে, ১০ই মহররম কেয়ামত সংগঠিত হইবে (আল হাদিস) ।
ইয়াজিদ বিন মুযাবিয়া তার পিতার মৃত্যুর পর তিনি নিজেকে মুসলিম জাহানের খলিফা হিসেবে নিজেকে ঘোষনা করেন । ইয়াজিদ বিন মুযাবিয়া ছিলেন একজন প্রকৃত মোনাফেক। তিনি এমন পথভ্রষ্ট ছিলেন যে, সে মধ্যপানকে বৈধ্য ঘোষনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত স্বৈরাচারী শাসক। মুলত ইয়াজিদ বিন মুযাবিয়া ছিলেন ইসলামের চিরশত্রæ। নানা করণে হযরত হোসাইন (রাঃ) শাসক হিসাবে ইয়াজিদ মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এর পর ইমাম হোসাইন (রাঃ) মক্কা হতে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শেষ পর্যন্ত সে কারবালার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এই সময় ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে প্রায় চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে। নানা নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে উভয় পক্ষের যুদ্ধ শুরু হয়। কাবালার যুদ্ধ সকাল হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। যুদ্ধের দিনটি ছিল ১০ই অক্টোবর ৬৮০ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই মুহাররম ৬১ হিজরী। এই যুদ্ধে ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও তার ৭২ জন সঙ্গী শাহাদৎ বরণ করে। শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি নিজে ইমাম হোসাইনের কন্ঠদেশে ছুড়ি চালিয়ে তাকে হত্যা করেন। অনেকগুলো কারণে দিনটি মুসলমাদের নিকট বেদনাদায় ও স্বরণীয়। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত হুসাইন বলেন আমার মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে হলেও যেন মুহাম্মদের দ্বীন দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠত হয়। কারবালা প্রান্তে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা মুসলমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছে ক্রন্দন নয় বরং ত্যাগ চাই। সমগ্র মুসলমাদের নিকট আশুরার গুরত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক ।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply