বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ অপরাহ্ন
গাজীপুর থেকে সাইফুল আলম সুমনঃ— বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী, সাবেক এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মোঃ রহমত আলী (৭৪ বছর ৫মাস ২১ দিন) রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রবিবার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে তিনি মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন যাবত কিডনি, ডায়াবেটিস ও হার্ডের সমস্যাসহ বার্ধ্যক্যজনিত রোগে ভোগছিলেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতে আমৃত্যু তিনি দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সিনিয়র সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও তার জুনিয়র অ্যাডভোকেট হারুন-অর রশীদ ফরিদ এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুনঃ গাজীপুরে টেকনিক্যাল পদমর্যাদার দাবীতে হাম রুবেলা ট্রেনিং বর্জন
বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মোঃ রহমত আলী ১৯৪৫ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের শ্রীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আছর আলী ও মাতা শুক্কুরজান বিবি। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন।
বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মোঃ রহমত আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১১বৎসর বয়সে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হোন। ১৯৬২ সালের ১৭ই এপ্রিল শ্রীপুর হাই স্কুল মাঠে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে গ্রেফতার হোন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়ে তিন মাস কারাভোগ করেন। ১৯৬৬ সালে ৭ই জুন তেজগাঁও শিল্প এলাকায় মিছিলে নেতৃত্ব দান এবং গ্রেফতার হোন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গতাজ তাজ উদ্দিন আহমদের পক্ষে প্রচারণার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কলকাতার ৮ নাম্বার থিয়েটারের সাথে মিঃ বুশ ও জি এম চ্যার্টাজীর সাথে সমন্ব্য় করে ফ্লাইট কুরিয়ার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে ১৯শে এপ্রিল ১৯ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষকলীগের নবগঠিত কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য’র পদ লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শতাধিক বস্তিবাসি পরিবারকে দিনাজপুরে পুর্ণবাসিত করেন। ১৯৭৪ সালে কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক পদ লাভ করেন। ১৯৭৬ সালে ১০ জুলাই মতিঝিলের কমাশির্য়াল কো-অপারেটিভ ব্যাংক থেকে গ্রেফতার হোন এবং ২ বছর ৮ মাস ১৭ দিন কারাভোগ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হয়ে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে নির্যাতন করে তার ১৭ টি দাঁত ভেঙ্গে ফেলে দেওয়া হয়। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষকলীগের সভাপতির পদ লাভ করেন। ১৯৯০ সালে ২৯ নভেম্বর সরকারবিরোধী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হোন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের টিকেটে নৌকা প্রতিক নিয়ে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে (গাজীপুর-৩, শ্রীপুর-কালিয়াকৈর-১৯৬) সংসদীয় আসন থেকে পরপর বিপুল ভোটে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হোন। ১৯৯৬ সালের ১ সেপ্টেম্বরে স্থানীয় সরকার কমিশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। ১৯৯৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বিশেষ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হোন। ১৯৯৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয় ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহন করেন।
আরও পড়ুনঃ ড. শামসুজ্জোহার শাহাদাত বার্ষিকীকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও তার জুনিয়র অ্যাডভোকেট হারুন-অর রশীদ ফরিদ জানান, রাজনৈতিক জীবনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ অনেক গুরুত্বপুর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। মহান এ মানুষটি জীবনের সব কিছু উজার করে সততা, আন্তরিকতা, দেশ প্রেমের মাধ্যমে বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে কর্মী তৈরী করে গেছেন। নিরঅহংকারি, শিক্ষানুরাগী, আদর্শ রাজনীতিবিদ ও সকলের পরম শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তিটি আমৃত্যু এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ব্যায় করেছেন। গাজীপুরবাসীসহ দেশবাসীর কাছে উনার জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ যেন উনাকে বেহেশতের সর্বোচ্চ মোকাম জান্নাত দান করেন।
তিনি আরো জানান, বাদ জোহর ধানমন্ডির শংকর জামে মসজিদে, বাদ আছর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের দক্ষিন প্লাজায়, বাদ এশা রাজধানীর সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে বায়তুল মামুর জামে মসজিদে, আগামীকাল (১৭ ফেব্রুয়ারী, সোমবার) দুপুর ১ টায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে এবং মঙ্গলবার তার নিজ এলাকা গাজীপুরের শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজ মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। রহমত আলী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকারের (১৯৯৬ সালে) একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের প্রবক্তা। তাঁর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রহমত আলীর মেয়ে অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসী একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য।
আরও পড়ুনঃ ঠাকুরগাঁওয়ে হাসকিং মিলের বয়লার বিস্ফোরিত নিহত-১, আহত-৯
বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও (গাজীপুর-৩, শ্রীপুর-কাউলতিয়া, মির্জাপুর) সংসদীয় আসনের এমপি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শামসুল আলম প্রধান, শ্রীপুর পৌর মেয়র আনিছুর রহমান, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান ফকির, সাধারন সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক।
রবিবার মরহুমের প্রথম জানাজা শঙ্কর জামে মসজিদে, দ্বিতীয় জানজা বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা, মাগরিববাদ এলিফ্যান্ট রোডের বায়তুল মামুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে রহমত আলীর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল বাদ জোহর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে চতুর্থ জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ হিমঘরে রাখা হবে। মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি শ্রীপুরে পঞ্চম জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে সমাহিত করা হবে রহমত আলীকে ।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply