বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন
পটুয়াখালী থেকে এম কে রানাঃ পটুয়াখালীর ৮টি উপজেলায় কারেন্ট সুদে জড়িয়ে মানুষ ফতুর, যাচ্ছে প্রাণ! পালাচ্ছে মানুষ। সুদখোরদের নির্মম নির্যাতনে মানুষ এখন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। এটা এখন এ জেলায় সাধারন ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। অত্যাচারের স্টীমরোলারে পিষ্ট সাধারণ মানুষ এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব। অবস্থাটা এমন, যেন সব কিছুই সুদে কারবারিদের হাতে জিম্মি। সুবিচার না পাওয়া অসহায় মানুষ গুলো এখন আর বিচার চায় না। বৃহস্পতিবার বিকেলে বড় আক্ষেপের সাথে এমনটাই জানালেন সদর উপজেলার সুদের দায়ে সব হারানো হানিফ সিকদার (৪০)।
বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়নের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে জানান, জীবিকার তাগিদে তিনি বেশ কয়েক জনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা সুদে নেন। এক বছরে ওই টাকার ৩-৪ গুন টাকা দিলেও এখনও তাদের টাকা পরিশোধ হয়নি। বর্তমানে সুদে কারবারিরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অবর্ননীয় অত্যাচার নির্যাতন করছে। এমনকি এই করোনা মহামারির মধ্যেও টাকার জন্য চাপ দেয়ায় ভিটে মাটি বিক্রি করে তাদের টাকা দিয়েছি, এখন আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। যার প্রেক্ষিতে তার ভিটে মাটি বিক্রি করে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
এছাড়া মির্জাগঞ্জ, দুমকী, দশমিনা, গলাচিপা, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী উপজেলায় এদের ভয়াবহ অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলছে। অনেকেই তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন আপনি আজ নিউজ করলে কাল আমার বাড়িতে হামলা করবে তখন আমি কি করবো । যারা সুদের ব্যাবসা করে তারা ক্ষমতাশালী লোকজনের ছত্রছায়ায় চলে বিধায় তাদের কেউ কিছু বলে না, যে সুদে টাকা নেয় তারা দূর্বল হওয়ায় অত্যাচারের কোন সীমা থাকে না।
আরও পড়ুনঃ শিবপুর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আইসোলেশন ওয়ার্ডের শুভ উদ্বোধন করেন- শিল্পমন্ত্রী
সদর উপজেলার পশরবুনিয়া গ্রামের ব্যাবসায়ী হালিম খান জানান, তিনি পটুয়াখালী সেন্টার পাড়া কালীবাড়ী রোডে টেইলার্স এর ব্যাবসা করতেন, ঐ এলাকার জনৈক এক সুদি ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা সুদে নেন। সেই বাবদ জমি দোকান বিক্রি করে সুদারুকে ৮ লাখ টাকা দিয়ে পথে বসে যাওয়ার পরও সে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করে। এর পর তিনি অন্যের দোকানে কাজ করে তা পরিষোধ করেন।
আরেক ভুক্তভূগী জানান, এর আগে সুদে কারবারিদের অত্যাচরে বহুলোক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। প্রশাসনের লোকজনের সাথে ঘনিষ্ঠতা থাকায় এদের কেউ কিছু বলে না।
এছাড়া লাউকাঠি ইউনিয়নের মনরঞ্জন দাস নামের এক ব্যাবসায়ী সুদের টাকার অত্যাচার সইতে না পেরে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। তিনিও সেন্টার পাড়া এলাকায় ব্যাবসা করতেন।
সুদি কারবারিদের অত্যাচারের স্টীমরোলারের চাপ সইতে না পেরে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি ফেলে পালিয়েছে সদরের বহু মানুষ। তাছাড়া বহু মানুষের ভিটেমাটি জোর পূর্বক লিখে নিয়েছে সুদখোররা। পটুয়াখালী সদরের পুরান বাজার, কাঠপট্টি, শিমুল বাগ, সেন্টার পাড়া, আদালত পাড়া, চড়পাড়া সহ এমন কোন এলাকা নেই যেখানে এদের আধিপত্য নেই। এরা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কামিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এ ব্যাপারে সুদি ব্যাবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করলে কেউ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লতিফা জান্নাতি জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ঘটনা অত্যান্ত দুঃখজনক। বিষয়টি আইন-শৃংখলাবাহীনি তদন্ত করছে। এছাড়া সরকারী অনুমোদন ছাড়া কেউ অবৈধ ভাবে অর্থলগ্নী ব্যবসা করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রীয়া চলছে বলে তিনি উল্লেখ করে।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply